সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪১ অপরাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনায় স্ত্রীর সঙ্গে কলহের জের ধরে হত্যার উদ্দেশ্যে এক এক করে মাতৃহীন দুই শিশু শ্যালককে নদীতে নিক্ষেপ করেছে দুলাভাই। এতে ১৮ মাস বয়সী এক শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও মৃত্যু হয়েছে সাত বছর বয়সী অপর আরেক শিশুর। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ডালভাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে. বৃহস্পতিবার বিকেলে খরস্রোতা বিষখালীর নদীর সাথে যুক্ত একটি জলাশয়ে প্রথমে সাত বছরের শিশু আব্দুল্লাহকে নিক্ষেপ করেন তাদের দুলাভাই মোসলেম (৩০)। এতে শিশু আব্দুল্লাহর মৃত্যু হলে তার মৃতদেহ বিষখালী নদীতে ভাসিয়ে দেন তিনি। এরপর ১৮ মাস বয়সী অপর শিশু আফসানকে জলাশয়ে নিক্ষেপ করার সময় আ. রহীম নামের স্থানীয় একজন ঘটনাটি দেখে ফেলেন। পরে আ. রহিমের সহযোগিতায় তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করা হয় শিশু আফসানকে। তবে শিশু আব্দুল্লাহর মৃতদেহ বহু খোঁজাখুজি করেও পাওয়া যায়নি। আব্দুল্লাহ এবং আফসান আপন দুই ভাই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একই ইউনিয়নের রায়ভোগ গ্রামের ছগির মিয়ার (৪০) তিন মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে শিশু আব্দুল্লাহ ও আফসান সবার ছোট। মোসলেম শিশু আব্দুল্লাহ ও আফসানের বড় বোন ছবি বেগমের স্বামী।
নিখোঁজ শিশু আফসানের পিতা ছগির মিয়ার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঘাতক মোসলেমের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। রাজধানী ঢাকায় থাকার সুবাদে সেখানে পরিচয় হওয়ার পরে তার মেয়ে ছবি (২০) বেগমের সাথে মোসলেমের বিয়ে হয়। মোসলেম রাজধানী ঢাকার একজন রিকশা শ্রমিক। তিনি নেশাগ্রস্ত হওয়ায় বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো। মোসলেম তার স্ত্রী সন্তানের ভরণপোষণও ঠিকমত নির্বাহ করতেন না। তাই মাসখানেক আগে শিশুপুত্র নিয়ে পিতার বাড়ি বরগুনার রায়ভোগ গ্রামে চলে আসেন ছবি বেগম। সম্প্রতি ছবি বেগম তার ছোট ভাইবোন এবং একমাত্র শিশুপুত্র নিয়ে তাদের নানাবাড়ি ঢলুয়া ইউনিয়নের ডালভাঙ্গা গ্রামে বেড়াতে যান। তিনদিন আগে ঢাকা থেকে স্ত্রী পুত্রকে নিতে বরগুনায় আসেন মোসলেম। এ সময় স্ত্রী ছবি বেগম তার সঙ্গে যেতে রাজি না হলে মোসলেম তার শিশুপুত্রকে নিয়ে যেতে চান মোসলেম। স্ত্রী ছবি বেগম এবং শ্বশুর ছগির মিয়া মোসলেমের কাছে তার শিশুপুত্রকে দিতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রী ছবি বেগমের আপন ছোট দুই ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে নদীতে নিক্ষেপ করেন মোসলেম। প্রথমে সাত বছরের শিশু আব্দুল্লাহকে জলাশয়ে নিক্ষেপ করে হত্যার পর তার মৃতদেহ বিষখালী নদীতে ভাসিয়ে দেন।
এরপর অপর সহোদর ১৮ মাস বয়সী শিশু আফসানকে পানিতে নিক্ষেপ করলে আ. রহিম নামের স্থানীয় একজন এলাকাবাসী তা দেখে ফেলেন। ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা ঘাতক মোসলেমকে আটক করে রাখে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক মোসলেম পুলিশ ও স্থানীয়দের কাছে এমন তথ্য দিয়েছে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে উদ্ধার করে মোসলেমকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ। পরে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
বরগুনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, নিহত শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ঘাতক মোসলেমকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply